বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর ওয়েবসাইটে এখনো রয়েছে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধানের বাণী। সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং পলাতক গভর্নরের বাণীও নামানো হয়নি এখনো। জুলাই বিপ্লবের ৮ মাস পরও সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এই অবস্থা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিস্মিত করেছে। এ নিয়ে চলছে তোলপাড়।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) হচ্ছে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা। যেটি বাংলাদেশ ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনস্থ। বিএফআইইউ-এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে অর্থপাচারের প্রতিরোধ, সন্ত্রাসের অর্থায়ন বন্ধ এবং গণধ্বংসের অস্ত্র বিস্তার প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংস্থাটি কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। আর সে কারণেই পতিত ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্যান্য রাষ্ট্রীয় যন্ত্র সংস্কারের পাশাপাশি বিএফআইইউ-কেও ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিএফআইইউকেও ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়। এজন্য দীর্ঘ দিনে এ সংস্থায় কাজ করা ও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ ওঠা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও বদলি করা হয়।
বিএফআইইউ-এর প্রধান পদ থেকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হয় ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত মো. মাসুদ বিশ্বাসকে। শুধু তাই নয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএফআইইউ-এর সাবেক প্রধান কর্মকর্তা মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। পাশাপাশি দুর্নীতি, অনিয়ম আর অপরাধের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে দেশ থেকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে প্রভাবশালীরাই অর্থ পাচার করেছে সেই অর্থ ফেরত আনতে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রাধীন এই সংস্থাটি।
ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়ে ইতিমধ্যে প্রায় আট মাস অতিবাহিত হয়েছে। তবে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য যে উদ্যোগ বিএফআইইউ নিয়েছিল তা এখন ব্যাপকভাবে সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।
বিগত সরকারের সময় ফুলেফেঁপে ওঠা অনেকের বিদেশে সম্পদের তথ্য সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। অথচ বিএফআইইউ এর ওয়েবসাইটে এখনো পতিত সরকারের শাসনামলে প্রকাশিত প্রকাশনা দেখা যাচ্ছে।
সংস্থাটি একদিকে বলছে গত ১৫ বছরে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। অথচ আবার পতিত সরকারের আমলে প্রকাশিত প্রকাশনা এখনো তাদের ওয়েবসাইটে রেখে দিয়েছে। যা সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক এবং স্ববিরোধী অবস্থান। ওই প্রকাশনা দেখা যাচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী রয়েছে। এ ছাড়াও তার (শেখ হাসিনা) সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, যার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে এবং সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরসহ বিএফআইইউ-এর সাবেক প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাসের বাণী যুক্ত রয়েছে। যাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সহ নানা রকম অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিসহ হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সাবেক গভর্নর ফজলে কবির এর মেয়াদে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। বিএফআইইউ এর সাবেক প্রধান কর্মকর্তা মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, বেদখল ভোগ, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে জমি ও ফ্ল্যাট সহ আরো নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যাদের বিরুদ্ধে এতোসব অভিযোগ তাদের বাণী সংবলিত একটি প্রকাশনা কেন এখনো বিএফআইইউ-এর সাইটে শোভা পাচ্ছে? যে সংস্থাটি বলছে পতিত সরকারের শাসনামলে পাচারকৃত হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে এবং তারা তা উদ্ধারে কাজ করছে কিন্তু তারা কেন গত আট মাসে ওই সরকারের শাসনামলে একটি প্রকাশনা মাত্র সরিয়ে ফেলতে পারল না? তাহলে কি বিএফআইইউ-এর মধ্যেই আওয়ামী ভূত রয়েছে? যে কারণে আট মাসেও একটি প্রকাশনা সরানো সম্ভব হয়নি। নাকি আওয়ামী প্রেতাত্মারা ইচ্ছে করেই এটা রেখেছে? যদি বিএফআইইউ-এর মধ্যেই আওয়ামী ভূত থেকে থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের লুটেরাদের পাচারকৃত টাকা উদ্ধার করবে কে?